Thursday, January 3, 2019

দু‘আ ও দু‘আ কবুলের শর্ত


মোনাজাত



খুৎবা- স্লুইচগেট জামে মসজিদ,রাজিবপুর। (3/1/2019)
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ﴿غافر: ٦٠﴾ يستكبرون عن دعائي لأن الدعاء نوع من العبادة ومن أفضل أنواعها
আল্লাহ তায়ালা বলেন,আমার কাছে দু কর,আমি কবুল করবযারা দু করা থেকে অহংকার করে বিরত থাকে ,তারা লাঞ্চিত হয়ে দোযখে প্রবেশ করবে (সুরা গাফির)
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ -رَضِيَ اَللَّهُ عَنْهُمَا- عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ إِنَّ اَلدُّعَاءَ هُوَ اَلْعِبَادَةُ  رَوَاهُ اَلْأَرْبَعَةُ, وَصَحَّحَهُ اَلتِّرْمِذِيُّ وَلَهُ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ بِلَفْظِ: اَلدُّعَاءُ مُخُّ اَلْعِبَادَةِ
عن أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ لَيْسَ شَيْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اَللَّهِ مِنَ الدُّعَاءِ  وَصَحَّحَهُ اِبْنُ حِبَّانَ, وَالْحَاكِمُ .
হাদিসে আসছে, দু ইবাদত, অপর বর্ননায় আসছে,দুআর চেয়ে প্রিয় রবের নিকট আর কিছু নয়অন্য হাদিসে আসছে,যারা দু করেনা রব তাদের উপর রাগান্নিত হন
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "من لا يسأله يغضب عليه"َ رَوَاهُ أحمد من لم يدع الله، عز وجل، غضب عليه
عن الأعمش إن الدعاء هو العبادة وهكذا رواه أصحاب السنن: الترمذي، والنسائي ،وابن ماجه، وابن أبي حاتم، وابن جرير،. وقال الترمذي: حسن صحيح.
عن ابن عباس أنه قال أفضل العبادة الدعاء رواه الحاكم وصححه
আল্লাহ তায়ালার নিকট সকল লোক অধিক প্রিয় যারা অধিকহারে দু করে, আর অপ্রিয় সকল লোক যারা দু করা থেকে বিরত থাকে (رواه ابن أبي حاتم)
দু কবুলের শর্ত
/  আল্লাহ্ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। হাদিসে আসছে-যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্ কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্ কাছে সাহায্য চাইবে।(সুনানে তিরমিযি)
/  রসুলের সুন্নতের আলোকে দু‘আ করা ।
৩/ দুআয়  কোন পাপের অংশ না থাকা।
/  দু‘আরফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া না করা।
/ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্তানিয়ে দু করা।কবুলের দৃঢ় একিন রাখা
/ মনযোগ সহকারে দু করা।উদাসীন অন্তরের দু কবুল হয় না।
/ খাদ্য হালাল হওয়া হারামখোরের দু কবুল হয় না।
/ ফরজ বাদ দিয়ে দুআয় মশগুল থাকা
ু‘আ কবুলের সম
/আজান একামতের মধ্যে দু‘আ কবুল হয়ে থাকে।
عَنْ أَنَسٍ  رضي الله عنه  قَالَ: قَالَ رَسُولُ اَللَّهِ  صلى الله عليه وسلم  اَلدُّعَاءُ بَيْنَ اَلْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ لَا يُرَدُّ  أَخْرَجَهُ النَّسَائِيُّ, وَصَحَّحَهُ اِبْنُ حِبَّانَ
/ সিজদারত অবস্থায়, সিজদাহে দোয়া কবুল হয়ে থাকে।
/ বৃষ্টি যখন অবতীর্ণ হয়, তখন দু‘আ কবুল হয়ে থাকে।
/ জুমার দিন ইমাম সাহেব খুতবা দেওয়া শুরু করা থেকে সালাত শেষ করা পর্যন্ত এবং বিকেল বেলায় সালাতুল আসর’-এর পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দু‘আ কবুল হয়ে থাকে।
/ রাতের শেষ প্রহর অর্থাৎ ফজরের আগে দু‘আ কবুল হয়ে থাকে।
/ জমজমের পানি পান করার সময়
/ রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলে
/ ফরজ সালাতের পরের সময়টাতে
/ কদরের রাতে
১০/
১১/ আরাফাতের দিনের দু‘আ
/ জিলহজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ দিন
১৩/ রোজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দু‘আ
কার দু‘আ কবুল হয়
মজলুম নির্যাতিত ব্যক্তি
মুসাফিরের দু‘আ
সন্তানের জন্য পিতামাতার দু‘আ
পিতামাতার জন্য সন্তানের দোয়া
অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বোনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দু‘আ
জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখোমুখি হলে
অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে যাবার পর সেই ব্যক্তির দু‘আ
৮। অসুস্থ ব্যক্তির দু‘আ, যে পর্যন্ত সে সেরে না উঠে
৯। হাজীর দু‘আ, যে পর্যন্ত সে বাড়িতে ফিরে না আসে
১০। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ
১১    রোজাদার ব্যক্তির দু‘আ ।    
এছাড়াও জামাতের সুরা ফাতিহা পড়ার পর আমিন বলার সময়, মসজিদুল হারামের ভেতর কাবার সামনে, হজ্জ্বের সময় কংকর নিক্ষেপের সময়  দু‘আ কবুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে সহীহ হাদীসে এসেছে।
কার দুআ কবুল হয় না
এক. যে ব্যক্তির অধীনে দুশ্চরিত্রা নারী আছে কিন্তু সে তাকে তালাক দেয় না। 
দুই. যে ব্যক্তি অন্য লোকের কাছে তার পাওনা আছে কিন্তু সে তার স্বাক্ষী রাখেনি। 
তিন. যে ব্যক্তি নির্বোধ ব্যক্তিকে সম্পদ দিয়ে দেয়।
"
ثلاثة يدعون فلا يستجاب لهم : رجل كانت تحته امرأة سيئة الخلق فلم يطلقها ، و رجل كان له على رجل مال فلم يشهد عليه ، و رجل آتى سفيها ماله و قد قال الله وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ

ু‘আ কবুল না হওয়ার কার
) হারাম অর্থ দ্বারা জীবন ধারণ করা
) আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম-কানুনের বাইরে চাওয়া' যেমন,গাছ রোপণ না করেই ফলের জন্যে দু‘আ করা। .
) কঠোর, নির্মম, নির্দয় নিষ্ঠুরদের দু‘আ আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।
) দু‘আ কবুলে কল্যাণ না থাকা। যেসব দোয়ায় বান্দার কল্যান থাকেনা সেসব দু‘আ আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না।
) অন্যের হক নষ্ট করা এবং অন্যের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা, দু‘আ কবুল না হওয়ার  অন্যতম কারণ।
) গোনাহে লিপ্ত হওয়া ,যদি এমন হয় দু কবুল হলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দু‘আ কবুলের প্রতিবন্ধকতা
. শুধু বিপদের সময় দু‘আ করা,
. পাপকাজ থেকে বিরত না থাকা,
. অন্তরিকভাবে দোয়া না করা,
. হালাল জীবিকা আহার না করা,
. দু‘আর সাথে কর্ম প্রচেষ্টার সংযোগ না থাকা,
. দু‘আ গ্রহণে বিশেষ কোন সমস্যা থাকা
দু‘আ কবুল হওয়ার আলামত
 () মোনাজাতের পর ইবাদতে মন লাগা, গুনাহের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হওয়া।
() পূর্বের অবস্থার মধ্যে পরিবর্তন অনুভূত হওয়া।
() আখেরাতের প্রতি মন ধাবিত হওয়া। দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি হওয়া। যদি এমন অবস্থা অনুভূত হয়, তাহলে ধারণা করা যায় যে,দু কবুল হচ্ছে
দু‘আর আদব

পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দু‘আ করলে আল্লাহতায়ালা সেই দু‘আ কবুল করবেন।
আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দু‘আ করা : আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফ দিয়ে দু‘আ শুরু ও শেষ করা
বিনয়ের সঙ্গে দু‘আ করা: বিনয়ের সঙ্গে দু‘আ করা।
মিনতিভরা কন্ঠে দু‘আ করা: মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়।
দুআয় হাত তোলা: রসুল যে সকল দুআয় হাত তুলেছেন সকল দুআয় হাত তোলাযে সকল দুআয় হাত তোলেনি সে সকল দুআয় হাত না তোলাহাত তুললে ,বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দুহাতের তালু আসমানের দিকে রাখবে, এবং হাত সম্পূর্ণ সম্প্রসারিত করে দুহাতের মধ্যে ২/১ আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখবেহাত কচলানো, রশি পাকানোর মতো হাতের তালু ঘষাঘষি করা দু‘আর আদবের খেলাপ।দু‘আ শেষে দু,হাত মুখে ফিরাবে।
যেসকল দুআয় রসুল থেকে হাত তোলা প্রমানীত-
() যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দু,
() কবর জেয়ারতে কবরবাসীদের জন্যে দুআয়,
()আল্লাহর কাছে বৃষ্টিচেয়ে দুআয়,
()বিপদাপদে দু,
()চন্দ্রগ্রহন লাগলে দুআয়,
()সন্তানের জন্যে পিতা-মাতার দুআয়,
()কাবাঘর দেখে দুআয়,
()ছাফা পাহাড়ে উঠে দুআয়,
()মারওয়া পাহাড়ে উঠে দুআয়,
(১০)আরাফার ময়দানে দুআয়,
(১১) মুযদালাফার দুআয়,
যে সকল দুআয় রসুল থেকে হাত তোলা প্রমানীত নয়-
()জানাযার ছালাতের পর,লাশ দাফনের আগে,
()ফরজ ছালাতের পর সম্মিলিত দুআয়,
() জুমা বা ঈদের খুৎবায়
শ্রেষ্ঠ দু‘আ কোনটিঃ
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ﴿البقرة: ٢٠١﴾
"রাব্বানা আতিনা ফীদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফীল আখিরাতি হাসানাতাঁও ওয়া কিন 'জাবান নার" ( প্রতিপালক, আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন আর আমাকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন )
তবে উল্লেখিত সময় সহ সকল সময়েই আল্লাহ আমাদের দু‘আ কবুল করার জন্য সর্বদা জাগ্রত আছেন।

মুফতি আব্দুল্লাহ খান ফয়েজী
সহঃঅধ্যাপক সানন্দবাড়ী সিঃ মাদ্রাসা,জামালপুর
খতিব-স্লুইচগেট জামে মসজিদ,রাজিবপুর,কুড়িগ্রাম
০১৭২৫১৮৩২৪৫

No comments:

Post a Comment

প্রচলিত মুনাজাত ও তার হুকুম

ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন মসজিদে বেশ কিছুদিন থেকে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত চালু হয়ে আসছে । ফরজ সালাতের সালাম ফিরানো...