Saturday, January 5, 2019

প্রচলিত মুনাজাত ও তার হুকুম


ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন মসজিদে বেশ কিছুদিন থেকে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত চালু হয়ে আসছে ফরজ সালাতের সালাম ফিরানোর পর ,সাথে সাথে ইমাম-মোক্তাদি সম্মিলিত ভাবে হাত তোলেন ,ইমাম বাংলায় বা আরবীতে ,নিজের মত মতো বা রসুলের পঠিত দু থেকে নিঃশব্দে অথবা স্বশব্দে দু-মুনাজাত পড়তে থাকেন ,মোক্তাদিরা ইমামের আওয়াজ শুনুক বা না শুনুক আমীন আমীন বলতে থাকেন ,উঠানো হাত দ্বারা নিজ নিজ মুখ মাছেহ করার মাধ্যমে মুনাজাতের সমাপ্তি করে থাকেন ,এটাই হলো প্রচলিত মুনাজাত যা রসুল ,তার সাহাবা মুজতাহিদ ইমামদের সময়ে কখনোও ছিলো না হাদিসে বর্নিত খাইরুল করুনেরতথা রসুল ,সাহাবা তাবেঈদের জামানার  পর এর প্রচলন হওয়ায় একে আমরা প্রচলিত মুনাজাত বলে থাকি
عن عمران بن حصين قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم إن بعدهم قوما يشهدون ولا يستشهدون ويخونون ولا يؤتمنون وينذرون ولا يفون ويظهر فيهم السمن " . وفي رواية : " ويحلفون ولا يستحلفون " . متفق عليه
                                                                  প্রচলিত মুনাজাতের হুকুম
মুস্তাহাব- উপমহাদেশের বেশ কিছু উলামায়ে কেরাম প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব”বলে থাকেন মুনাজাত একটি ফযিলত পুর্ণ আমল কোরআন-হাদিসে দু করার জন্যে তাকিদ করা হয়েছে। আর তাছাড়া এটা বাপ-দাদ তথা পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে করা হচ্ছেএই যুক্তি ছাড়া প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলার পক্ষে এদের আর কোন প্রমান নাই ,বা এরা উল্যেখও করেন নাই
 বেদাত- মুসলীম বিশ্বের হক্কানী উলামায়ে কেরামদের একটা বড় অংশ প্রচলিত মুনাজাত কে বেদাত বলে থাকেন।এদের প্রমান হলো প্রচলিত মুনাজাত রসুল, তার সাহাবা মুজতাহিদ ইমামদের  সময় তথা খাইরুল  করুনেছিলো নাখাইরুল কুরুনের পরে যা আবিস্কার হয়েছে তা মিথ্যা  ---
عن عمر رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " أكرموا أصحابي فإنهم خياركم ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم ثم يظهر الكذب حتى إن الرجل ليحلف ولا يستحلف ويشهد ولا يستشهد ألا من سره بحبوحة الجنة فليلزم الجماعة فإن الشيطان ثالثهم ومن سرته حسنته وساءته سيئته فهو مؤمن " كنز العمال مشكاة المصابيح
আর ইসলামী শরীআতের সর্বজন স্বীকৃত মুলনীতি হলো খাইরুল করুনে ছিলো না এই রুপ কোন কাজ যদি মানুষেরা ছওয়াবের নিয়তে করে এতে ছওয়াব হবে না বরং গুনাহ হবে কারন এই জাতীয় কাজকে শরীআতে বেদাত বলা হয় ,আর বেদাতের পরিনতি জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুইনা-
عن العِرباضِ بن ساريةَ رضي اللّه عنه، قال : وَعَظَنا رسولُ اللّه صلى اللّه عليه وسلم موعظةً وَجِلت منها القلوب، وذرفتْ منها العيون، فقلنا : يا رسولَ اللّه ! كأنها موعظةُ مُودّع فأوصنا، قال : " أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإنْ تأمَّرَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ، وَإنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اخْتِلافاً كَثِيراً، فَعَليْكُم بسُنَّتِي وَسُنَّةِ الخُلَفَاءِ الرَّاشِدينَ المَهْدِيِّينَ عَضُّوا عَلَيْها بالنَّواجِذِ، وَإيَّاكُمْ وَمُحْدَثاتِ الأُمُورِ، فإنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ " رواه في سنن أبي داود والترمذي وقال : حديث حسن صحيح احمد  و النساءئ
এই রুপ কাজ আবিস্কার করাকে বলা হয় শরীআতের সীমা লংঘন আর কোরআনের ভাষায় সীমা লংঘন কারী জালেম ,আর জালেমের পরিনতি জাহান্নাম পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২২৯ সুরা নেসা  ১৪ সুরা তালাকের নং আয়াত এদের দাবীর প্রমান
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ ﴿البقرة: ٢٢٩﴾ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَٰلِكَ أَمْرًا ﴿الطلاق: ١﴾ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ ﴿النساء: ١٤﴾
নির্ভর যোগ্য সুত্রে বর্নিত বেশ কিছু হাদিস এরা নিজেদের মতের স্বপক্ষে দলিল হিসাবে উল্যেখ করে থাকেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-  مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ  قَالَ ابْنُ عِيسَى قَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم-  مَنْ صَنَعَ أَمْرًا عَلَى غَيْرِ أَمْرِنَا فَهُوَ رَدٌّ  رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ وَمُسْلِمٌ عن عائشة رضي الله عنها ، قالت : قال رسولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ علَيْهِ أمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ  رواه مسلم
عن بن عباس قال لما فتح رسول الله صلى الله عليه وسلم مكة قال إن الله عز وجل ورسوله حرم عليكم الخمر وثمنها وحرم عليكم الميتة وثمنها وحرم عليكم الخنازير وأكلها وثمنها وقال قصوا الشوارب واعفوا اللحى ولا تمشوا في الأسواق إلا وعليكم الأزر إنه ليس منا من عمل بسنة غيرنا كنز العمال

 
খেলাফে সুন্নত - কতিপয় আলেমদের মতে প্রচলিত মুনাজাত  খেলাফে সুন্নত মুস্তাহাব এজন্যে নয় , কোন কাজ মুস্তাহাব হওয়ার জন্যে প্রমান থাকতে হয় , প্রচলিত মুনাজাতের বৈধতার কোন প্রমান যারা মুস্তাহাব বলেন তাদের কাছে নেই আর বেদাত এজন্যে নয় , প্রচলিত নিয়মে মুনাজাতের প্রমান না থাকলেও ,নামাজের সালামান্তে ইমাম মোক্তাদি সকলের জন্যে আলাদা আলাদা একা একা চুপে চুপে দু-মুনাজাত পাঠ করার প্রমান ইসলামী শরীআতে অনেক আছে ফলে প্রচলিত মুনাজাত মৌলিক ভাবে বেদাত নয় ,বরং মুলের উপর কিছু বৃদ্ধি হওয়ায় বেদাত তাই প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাবও নয় বেদাতও নয় বরং খেলাফে সুন্নত বেদাত বলে মুল মুনাজাত থেকে দুরে থাকা বোকামী আর মুস্তাহাব বলে প্রচলিত মুনাজাত কে গ্রহন করা মুর্খতা
                                                                         পর্যালোচনা                                                             
আমরা সকল উলামায়েকেরামকে শ্রদ্ধাকরি কিন্তু সকলের মতকে সঠিক মনে করি না ,কারন  একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মত সঠিক হতে পারে না যারা প্রচলিত মুনাজাতকে মুস্তাহাব বলে দাবী করে ইসলামী শরীআতে এদের দাবীর পক্ষে কোন প্রমান নাই তারা নিজেরাও তাদের মতের পক্ষে দুইটা যুক্তি দেয়া ছাড়া  কোন প্রমান উল্যেখ করেন নাই আর তাহলো () নামাজের পরে দু কবুল হয় ,() আমাদের পুর্বপুরুষদের সময় থেকে এই মুনাজাত চলে আসছে,আমরা মনে করিনা তারা ভুল করেছে আমরা তাদের যুক্তির জবাবে বলতে চাই নামাজের পরে সব মুছুল্লীরা যাতে দু পাঠ করার সুযোগ পায় এজন্যে আমরা প্রচলিত মুনাজাতকে নিষেধ করছি কারন প্রচলিত মুনাজাতের প্রচলন হওয়ায় ইমাম ছাড়া মোক্তাদিরা দু পাঠ করার সুযোগ পায় না তারা শুধু আমীন বলে  অথচ রসুলের শিক্ষা হলো ইমাম মোক্তাদি সকলেই দু পড়বে
আর কোরআন-হাদিস বাদ দিয়ে পুর্বপুরুষদের আনুগত্য এটাত কোরআনের দৃষ্টিতে হারাম  
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُوا بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلَا يَهْتَدُونَ ﴿البقرة: ١٧٠﴾
প্রকৃত কথা হলো প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাব নয়, কারন কোন কাজ মুস্তাহাব হওয়ার জন্যে প্রমান থাকতে হয় ,প্রচলিত মুনাজাত মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে কোন প্রমান নাই আর কিছুক্ষনের জন্যে মুস্তাহাব মেনে নিলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা মাকরুহ   গুনার কাজে রুপান্তরিত হবে , কারন শরীআতের মুলনীতি হলো মুস্তাহাব কাজকে যখন তার মর্তবা থেকে উপরে উঠানো হয় মাকরুহ নিষিদ্ধ হয়-
فى المجمع ان المندوب ينقلب مكروها اذا خيف ان يرفع عن رتبته  و شرح الطيبى من اصر على امر مندوب وجعله عزما و لم يعمل بالرخصة فقد اصاب منه الشيطان من الاضلال
মুস্তাহাব কাজের মর্তবা হলো যার মনে চায় করবে ,না চায় না করবে এটাকে খুব আবশ্যক মনে করা যাবে না কেউ করলেও,  তাকে খারাপ মনে করবেনা ,না করলেও  তাকে খারাপ বলবে না বর্তমান সমাজে প্রচলিত মুনাজাত এই মর্তবায় নেই ,এর থেকে উপরে উঠানো হয়েছে।এটাকে আবশ্যক মনে করা হচ্ছে, নামাজের অংশ মনে করা হচ্ছে,ফরজ ওয়াজিবের ন্যায় কখনোও ত্যাগ করা হচ্ছেনা যারা ত্যাগ করছে তাদের খারাপ বলা হচ্ছে,গালী দেয়া হচ্ছে,নামাজের একটা অংশ ত্যাগ করা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, এদের কে ইমামতের দায়িত্ব থেকে অপসারন করা হচ্ছে কোন মুস্তাহাব কর্মের সাথে এরুপ ব্যবহার করা হলে তা আর বৈধ থাকেনা অবৈধ হয়ে যায়
 যারা প্রচলিত মুনাজাত কে বেদাত বলেন এদের অভিমতই সঠিক , কেননা প্রচলিত মুনাজাত সুন্নত নয় কিন্তু সুন্নতের ধ্বংসকারী যারা প্রচলিত মুনাজাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা রসুলের শিখানো দু-মুনাজাত পাঠ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সুন্নত হলো ফরজ সালাতের সালামান্তে ইমাম-মোক্তাদি সকলেই রসুলের শিখানো যিকির দু থেকে নিজে নিজে চুপে চুপে পাঠ করবে প্রচলিত মুনাজাতে মোক্তাদিরা দু পাঠ করে না ইমামের দুআয় আমীন বলে ,ফলে এরা  আজীবন সুন্নতি দু-মুনাজাত থেকে বঞ্চিত থাকতেছে একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত, যে নতুন কাজ করার ফলে মানুষেরা রসুলের সুন্নত থেকে মাহরুম (বঞ্চিত) হয় তা নিকৃষ্ট বেদাত এই জাতীয় বেদাত কর্ম আবিস্কার না করে সুন্নকে আকড়ে ধরা হাজার গুনে উত্তম
عن غضيف بن الحرث الثمالي قال بعث إلى عبد الملك بن مروان فقال يا أبا أسماء إنا قد أجمعنا الناس على أمرين قال وما هما قال رفع الأيدي على المنابر يوم الجمعة والقصص بعد الصبح والعصر فقال أما إنهما أمثل بدعتكم عندي ولست مجيبك إلى شيء منهما قال لم قال لأن النبي صلى الله عليه و سلم قال ما أحدث قوم بدعة إلا رفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من إحداث بدعة رواه أحمد إسناده ضعيف
عَنْ حَسَّانَ قَالَ مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِى دِينِهِمْ إِلاَّ نَزَعَ اللَّهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لاَ يُعِيدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ رواه الدرمى  
 যারা প্রচলিত মুনাজাতকে খেলাফে সুন্নত বলেন ,কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে এদের মত গ্রহনযোগ্য ,তবে এই খেলাপে সুন্নতও বেদাত ইসলামী শরীআতের পরিভাষায় রসুল তার সাহাবাদের আমল কে সুন্নত বলা হয় প্রচলিত মুনাজাত রসুল তার সাহাবায়ে কেরাম তাদের হায়াতে জীবনে একবারও করেন নাই ফলে প্রচলিত মুনাজাত খেলাফে সুন্নত এতে কোন দ্বিমত থাকার কথা না বুখারী শরীফের হাদিসে আসছে যারা খেলাফে সুন্নত কর্মে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ইনতেকাল করবে ,রসুলের হাত থেকে কাওসারের শরবত পান করা থেকে তারা বঞ্চিত হবে-
عن سهل بن سعد قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " إني فرطكم على الحوض من مر علي شرب ومن شرب لم يظمأ أبدا ليردن علي أقوام أعرفهم ويعرفونني ثم يحال بيني وبينهم فأقول : إنهم مني . فيقال : إنك لا تدري ما أحدثوا بعدك ؟ فأقول : سحقا سحقا لمن غير بعدي " . متفق عليه
 এবার জানুন এই খেলাফে সুন্নত কর্মটি বেদাত কিনা ? সব খেলাফে সুন্নত বেদাত না হলেও প্রচলিত মুনাজাত যা প্রমানীত খেলাফে সুন্নত অবশ্যই বেদাত কারন এটা এমন কর্ম যা খাইরুল কুরুনে ছিলো না অথচ মানুষ ইবাদতের নিয়তে করে অবশ্যই পরিতাজ্য কারন এই অপকর্ম প্রচলন হওয়ায় মানুষেরা সুন্নতী দু-মুনাজাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে

মুফতি আব্দুল্লাহ খান ফয়েজী
খতিব  ¯স্লুইচগেট জামে মসজিদ,রাজিবপুর।
০১৭২৫১৮৩২৪৫/০১৮৩৫১৮৩২৪৫



No comments:

Post a Comment

প্রচলিত মুনাজাত ও তার হুকুম

ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন মসজিদে বেশ কিছুদিন থেকে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত চালু হয়ে আসছে । ফরজ সালাতের সালাম ফিরানো...