![]() |
ভুমিকাঃ জর্দা খাওয়া, বিড়িসিগারেট খাওয়া,গুল ব্যাবহার করা, হুকুমের দিক দিয়ে সবই এক । কারন জর্দা, বিড়ি, সিগারেট, গুল সব একই মুল উপাদান থেকে তৈরি, আর তাহলো তামাক পাতা। তামাক পাতা যদি বৈধ বা হালাল হয় জর্দা, বিড়ি, সিগারেট,গুল সবই বৈধ ও হালাল হবে । আর যদি তামাক পাতা অবৈধ ও হারাম হয় তামাক পাতায় তৈরি সব কিছুই হারাম হবে ।চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তামাক পাতা মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর, আর ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর তা মানুষের জন্যে হারাম ।অতএব কোরআন-হাদিস তথা ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে জর্দা খাওয়া, বিড়ি-সিগারেট খাওয়া,গুল ব্যাবহার করা ছাফ হারাম । আর কোরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে যা ছাফ হারাম তা হালাল মনে করা কুফুরী বৈ অন্য কিছুই নয় ।তাই যারা জর্দা খায় এবং এটাকে হারাম মনে করে তারা ফাছেক, আর যারা জর্দা খায় এবং এটাকে হালাল বা মোবাহ মনে করে তাদের মধ্যে কুফুরীর আলামত বিদ্যমান ।
জানা আবশ্যকঃ- চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে তামাক পাতায় রয়েছে নিকোটিন নামক এক প্রকার বিষ যা মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর ।যেহেতু ইসলামী শরীআতে স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর জিনিস ভক্ষন করা হারাম সেহেতু তামাক পাতা ও তামাক পাতায় তৈরী জর্দা -গুল,বিড়ি-সিগারেট সবই হারাম ।
* ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে তামাক পাতা ও তামাকপাতায় তৈরী সব কিছু খমর তথা মাদকের অন্তর্ভুক্ত, কেননা খমর বা মাদক ঔ সকল জিনিস কে বলে যা পরিমানে বেশী খেলে মাতলামী সৃষ্টি করে ।আর একথা সর্বজন স্বীকৃত যে জর্দা পরিমানে বেশী খেলে মাথা ঘূরায় ,মাতলামী সৃষ্টি করে ।যেহেতু খমর বা মাদক খাওয়া হারাম সেহেতু তামাক পাতায় তৈরী জর্দা-গুল সবই হারাম ।হাদিস শরীফে আসছে, যত জিনিস মাতলামী সৃষ্টি করে সবই মদের অন্তর্ভুক্ত, যত জিনিস মদের অর্ন্তভুক্ত সবই হারাম (মুসলীম,হাঃনং ২০০৩,তিরমিযী,হাঃনং ১৮৬১,আবু দাউদ,হাঃনং ৩৬৭৯,ইবনে মাযা,হাঃনং ৩৩৮৭,মাসনাদে আহমাদ,হাঃনং ৪৬৪৫)।অপর হাদিসে আসছে নেশা জাতীয় দ্রব্য একবার খাইলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামায কবুল হয়না এই সময় মৃতু হলে জাহান্নামে যাবে (তিরমিযী,হাঃনং ১৮৬২,আবু দাউদ,হাঃনং ৩৬৮০,ইবনে মাযা,হাঃনং ৩৩৭৭)।আরএক হাদিসে আসছে নেশা জাতীয় দ্রব্য ভক্ষন করলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তৌবা কবুল হয় না ,এই সময় তৌবার আগে মারা গেলে দোযখে যাবে (নাসাঈ,হাঃনং ৫১৮০,হাকেম,হাঃনং ৮৩)।
عن بن عَبَّاسٍ عن النبي صلى الله عليه وسلم قال كُلُّ مُخَمِّرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَنْ شَرِبَ مُسْكِرًا بُخِسَتْ صَلَاتُهُ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا فَإِنْ تَابَ تَابَ الله عليه فَإِنْ عَادَ الرَّابِعَةَ كان حَقًّا على اللَّهِ أَنْ يَسْقِيَهُ من طِينَةِ الْخَبَالِ قِيلَ وما طِينَةُ الْخَبَالِ يا رَسُولَ اللَّهِ قال صَدِيدُ أَهْلِ النَّارِ ابو داؤد عن عبد اللَّهِ بن عَمْرٍو قال قال رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم * من شَرِبَ الْخَمْرَ وَسَكِرَ لم تُقْبَلْ له صَلَاةٌ أَرْبَعِينَ صَبَاحًا وَإِنْ مَاتَ دخل النَّارَ ابن ماجة عن ابن عمر من شرب الخمرة مرة لم تقبل توبته أربعين صباحا فإن تاب تاب الله عليه فإن عاد كان حقا على الله أن يسقيه من ردغة الخبال يوم القيامة كنز العمال.
عن جَابِرِ بن عبد اللَّهِ قال قال رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ما أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ابو داؤد ابن ماجة ترمذى مسند احمد عن بن عُمَرَ قال قال رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم * كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ رواه المسلم والترمذى و ابو داؤد و احمد
*যেহেতু জর্দা-গুল,বিড়ি-সিগারেটে কোন উপকার নাই সেহেতু এই খাতে খরচ করা অপচয়, আর অপচয় করা হারাম সেহেতু জর্দা-গুল,বিড়ি-সিগারেটের পিছনে টাকা পয়সা খরচ করা হারাম ।
إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا ﴿الإسراء: ٢٧﴾
عن عبد الله بن مسعود قال قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم * لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يسأل عن خمسة عن عمره فيما أفناه وشبابه فيما أبلاه وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه وعن ما عمل فيما علم المعجم الكبير
*ধুম পান ও জর্দা মানুষের মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে । দুর্গন্ধ কাছের মানুষ ও সাথের ফেরেশÍাদের কষ্ট দেয় ।যেহেতু অপরকে কষ্ট দেয়া হারাম সে হেতু ধুমপান ও জর্দা খাওয়াও হারাম ।
*ধুমপান ধুঁয়ার সৃষ্টি করে ।যেহেতু ধুয়া মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর সে হেতু ধুমপান হারাম ।নাক-মুখ দিয়ে ধুমা বের হওয়া দোযখিদের আলামত । শরীআতের মুলনীতি হলো যে সকল জিনিস মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর ,মানুষদের জন্যে কষ্টকর সব হারাম ।
কোরআনের আলোকে জর্দা ও ধুম পানঃ
তামাক পাতা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর একথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে প্রমানিত । মানব দেহের জন্যে ক্ষতিকর ,এমন বস্তু ভক্ষন করা মানব কুলের জন্যে হারাম একথা কোরআনের আলোকে প্রমানিত । যেমন এরশাদ হচ্ছে -তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করিও নাÑ(সুরা বাকারা-১৯৫) তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না (সুরা নেসা-২৯ )। জর্দাখাওয়া, ধুমপান করা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ,ডাক্তারি মতে নিজেকে ধ্বংস করা, নিজেকে ঘ্যুা করা ।
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴿البقرة: ١٩٥﴾ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ﴿النساء: ﴾٢٩
হাদিসের আলোকে বিড়ি-সিগারেট,জর্দাঃ
একথা সর্বজন স্বীকৃত যে মাত্রাতিরিক্ত ধুম পান ও জর্দা খাওয়ায় মাথা, ঘুরায় মাতলামী সৃস্টি করে ।বেশী পরিমান জর্দা খাইলে ব্রেনের স্বাবাভিক অবস্থা বিঘিœত হয় । হাদিস শরীফে আসছে যা বেশী পরিমানে খাইলে মাতলামী সৃস্টি হয় তার অল্প পরিমান খাওয়াও হারাম (আবু দাউদ,হাঃনং ৩৬৮১,তিরমিযী,হাঃনং ১৮৬৫,ইবনে মাযা,হাঃনং ৩৩৯২)।
عن جَابِرِ بن عبد اللَّهِ قال قال رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم * ما أَسْكَرَ كَثِيرُهُ فَقَلِيلُهُ حَرَامٌ ابو داؤد ابن ماجة ترمذى مسند احمد
আর এক হাদিছে আসছে, যা ভক্ষন করলে ব্রেনের স্বাবাভিক অবস্থা বিনস্ট হয়,মাতলামী সৃস্টি হয় তা মাদক ,আর মদ খাওয়া হারাম (মুসলীম,তিরমিযী,আবু দাউদ,মাসনাদে আহমাদ)
عن بن عُمَرَ قال قال رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم * كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ رواه المسلم والترمذى و ابو داؤد و احمد
আর এক হাদিসে আসছে নেশা সৃষ্টিকারী যত জিনিস আছে প্রত্যেকটি হারাম (তিরমিযী,আবু দাউদ,ইবনে মাযা ,মাসনাদে আহমাদ)।
عن بن عُمَرَ قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول * كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ رواه الترمذى و ابو داؤد وابن ماجة و احمد
আবু দাউদের হাওয়ালায় মেশকাত শরীফের হাদিছে আসছে আম্মাজান উম্মে সালমা (রাঃ) বর্ননা করেছেন রসুল (সঃ)ঔ সকল জিনিস খেতে নিষেদ করেছেন যাখেলে মাতলামী সৃস্টি হয় ,যা খেলে নেশা হয় (মেশকাত শরীফ-৩১৮) ।
عن أُمِّ سلمةَ رضي الله عنها قالتْ نَهى رسولُ الله عنْ كلِّ مُسكرٍ ومُفتِرٍ رواه أبو داود
হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন রসুল (সঃ) বলেছেন-তিন ব্যাক্তির উপর আল্লাহ তায়ালা বেহেস্ত হারাম করেছেন, ১/নেশাখোর,জর্দা খোরও নেশা খোর ২/ পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান ৩/ দায়ুস (মাসনাদে আহমাদ,নাসাঈ,মেশকাত , ৩৬৫৫)।
عن ابنِ عُمَرَ ، أنَّ رسولَ الله قال : ( ثلاثةٌ قدْ حرَّمَ اللَّهُ عليهمُ الجنَّةَ : مُدْمنُ الخمر ، والعاقُّ ، والدَّيُوثُ الذي يقُرُّ في أهلِه الخُبثَ ) ) . رواه أحمد ، والنسائي .
হযরত আবু মুছা(রাঃ) বলেন রসুল (সঃ) বলেছেন-তিন প্রকার লোক জান্নাতে যাবে না এর প্রথম প্রকার হলো নেশাখোর (মদ খোর, জর্দা খোর, গাজাখোর,ভাং খোর) (মাসনাদে আহমাদ) ।
عن أبي موسى الأشعريِّ ، أنَّ النبيَّ قال : ( ثلاثةٌ لا تدخلُ الجنَّةَ : مُدْمنُ الخمرِ ، وقاطِعُ الرَّحمِ ، ومُصدِّقٌ بالسِّحْرِ ) ) . رواه أحمد
শেষ কথাঃ
মনে রাখতে হবে বিভিন্ন প্রকার নেশাদার দ্রব্য যেমন মদ,গাজা, তারি ভাং এর হুকুম যা তামাক পাতা ও তামাকপাতায় তৈরি জিনিস যেমন বিড়ি-সিগারেট,জর্দা-গুল এর হুকুমও তা । এই জিনিস গুলি খাওয়া যেমনটি হারাম এগুলো বিক্রয় করা, আমদানি করা, এগুলো তৈরির কারখানায় চাকুরি করাও তেমনটি হারাম ।যেমন এরশাদ হচ্ছে-তায়ায়ানু আলাল বির্রে ওয়াত্তাকোয়া ওলা তায়ায়ানু আলাল ইসমে ওয়াল উদওয়ান - অর্থাৎ-তোমরা ভালো কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো, গুনার কাজে সহযোগিতা করো না(সুরা মায়েদা-২)।
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ ﴿المائدة: ٢﴾
আরও মনে রাখতে হবে কোন আলেম যদি বলে ধুম পান ও জর্দা খাওয়া মোবাহ অথবা কোন কিতাবে দেখেন ধুম পান ও জর্দা খাওয়া কে মোবাহ লিখেছে মনে রাখবেন এই হুকুম ঐ সময়ের জন্যে ছিল যখন মানুষ জানতো না তামাক পাতা মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর । এখন যখন প্রমাতি যে তামাক পাতা মানব স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর ,অতএব একে এখন আর মোবাহ বলার সুযোগ নাই ।মক্কা-মদিনার মুফতিদের সহ আরব বিশ্বের সকল বিজ্ঞ আলেম দের সিদ্ধান্ত হলো তামাক পাতার ক্ষতি প্রমানিত হওয়ার পর বিড়ি-সিগারেট,জর্দা-গুল কে মোবাহ বলার সুযোগ আর নাই ।এখন এটা বিজ্ঞজনদের স্বীকৃত স্বিদ্ধান্ত যে ,তামাক পাতা ও তামাক পাতায় তৈরি বিড়ি-সিগারেট,জর্দা-গুল সবই হারাম ।হারাম যেনেও যারা এ সব ভক্ষন করছে তারা শরীআতের দৃষ্টিতে ফাছেক-শক্ত গুনাহগার,আর যারা সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও হটকারী করে জর্দা খাওয়াকে হালাল মনে করছে তারা কোরআন-হাদিছের অকাঠ্য প্রমানে প্রমানিত হারাম কে হালাল মনে করার অপরাধে অপরাধি। কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমানীত হারামকে হালাল বলনেওয়ালা ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে কাফের।যারা সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর তা গ্রহন কওে না তারা জাহান্নামী ,যেমন এরশাদ হচ্ছে-যারা সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর(রসুলের) বিরোধিতা করে সত্যের পরিপন্থি পথ গ্রহন করে আমি তাদের কে পৃথিবীতে করতে দেই যা তারা করতে চায়, পরকালে তাদের কে দোযখে দাখিল করবো যা নিতান্ত নিকৃষ্ট স্থান (সুরা নেসা-১১৫)।
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ﴿النساء: ١١٥﴾
মুফতি আব্দুল্লাহ খানঁ ফয়েজী
সহঃঅধ্যাপক, সানানন্দ বাড়ি সিনিয়ার মাদ্রাসা
০১৭২৫১৮৩২৪৫;
No comments:
Post a Comment