Saturday, July 21, 2018

হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার কোন পুত্রকে কুরবানি করেছিলেন ?

ইব্রাহিম (আঃ) এর কবর


মহান প্রভু বিভিন্ন নবীকে ভিন্ন ভিন্ন সন্মানে সন্মানিত করেছেন । যেমন এরশাদ হচ্ছে- تلك الرسل فضلنا بعضهم على بعض منهم من كلم الله و رفع بعضهم درجات     البقرة  ( সুরা বাকারা -২৫৩ পৃষ্টা)।

আমরা সকল নবী-রাসুলদের উপর ঈমান আনতে ও তাদের সকল কে সন্মান করতে আদিষ্ট যেমন সুরা বাকারা ১৩৬ নং আয়াতে এরশাদ হচ্ছে--لا نفرق بين احد منهم ونحن له مسلم ,      لا نفرق بين احد من رسله
এখানে আমরা মুসলীম জাতীর পিতা ইব্রাহীম আঃ এর দুই পুত্র ইসমাঈল ও ইসহাক আঃ এর মধ্যে কে যবীহুলা ছিলেন তা প্রমানের চেষ্টা করছি ।এক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য কোরআন , হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে যা সঠিক তা তুলে ধরে সত্যান্নেসী মুসলীমদেরকে সত্য অবগত করানো এবং চির মিথ্যুক ইয়াহুদি ও তাদের মুনাফেক দোসরদের মুখোশ উমে¥াচন করা । 
এক নবীকে খাটো করে  অন্য নবীর প্রশংসা করার হীন ইচ্ছা আমাদের কোন দিনই ছিলো না । এ ধরনের খারাপ কাজ আমরা কখনো করবও না । 
পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাবে নবী ইব্রাহীম আঃ কর্তৃক আপন পুত্র কোরবানী করার জন্যে স্বপ্ন যোগে আদিষ্ট হওয়া ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে । তবে সেখানে তিনি তার কোন পুত্রকে কোরবানী করেছিলেন তার নাম উল্যেখ করা হয়নি ।আমাদের প্রিয় রসুল সঃ নিজেও ইব্রাহীম আঃ এর কোন পুত্র যবীহুল্লা (আল্লার ওয়াস্তে যবেহ কৃত) তার নাম স্পষ্ট করে বলেননি । 
মুসলমানদের চির শত্রু ,অভিশপ্ত ইয়াহুদীরা এই সুযোগ গ্রহন করে  তাদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুসারে সত্যকে অস্বীকার করে ,মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেছে , নবী ইব্রাহীম আঃ তার পুত্র ইসহাক আঃ কে কোরবানী করেছিলেন ।তারা তাদের দাবীর স্বপক্ষে বাইবেলের আদি পুস্তুক ২২ঃ২ কোরবানীর অধ্যায় উল্লেখ করে থাকেন ।যেখানে বলা হয়েছে ,“ তুমি আপন পুত্রকে, তোমার অদ্বিতীয় পুত্রকে ,যাহাকে তুমি ভালোবাস ,সেই ইসহাককে লইয়া মোরিয়া দেশে যাও ,এবং তথাকার এক পর্বতের কথা আমি তোমাকে বলিব,তাহার উপর তাহাকে হোমর্থে কুরবানী কর“ ।
এ ব্যপারে আমাদের বক্তব্য হলো , বাইবেল কোরআনের ন্যয় অবিকৃত আসমানী কিতাব নয় ।ফলে বাইবেলের কোন কথা অকাঠ্য প্রমান নয় ,যেমনটি কোরআনের প্রতিটি আয়াত । কোরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল করা হয়েছে ,এর হেফাজতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা গ্রহন করেছেন (انا نحن نزلنا الذكر و انا له لحافظون الحجر ৯ ) ,ফলে কোরআন কেয়ামত পর্যন্ত আনেওয়ালা মানুষদের জন্যে অকাঠ্য প্রমান । আর কোরআন ছাড়া সকল আসমানী কিতাব আল্লার পক্ষ থেকে নাজিল হলেও  এগুলির হেফাজতের দায়িত্ব যাদের উপর নাজিল করা হয়েছিলো তাদের কে দেওয়া হয়েছিলো(انا انزلنا التوراة فيها هدى و تور ...... بما استحفظوا من كتاب الله   .. المائدة ৪৪) ,ফলে কোরআন বাদে  সকল আসমানী কিতাব যা বর্তমান সমাজে পাওয়া যায় এর একটাও সঠিক ও প্রমান হওয়ার উপযুক্ত নয় । তাই বাইবেল শুধু মুসলমান নয় কোন মানুষের নিকটই প্রমান হওয়ার উপযুক্ত নয় ।
বাইবেলের উপরোল্লিখিত অংশে ইসহাককে ইব্রাহীমের (আঃ)  অদ্বিতীয় পুত্র বলা হয়েছে ,অথচ ্ঐ বাইবেলেরই আদি পুস্তুক ২১ঃ৫ ,এ বলা হয়েছে“ ইব্রাহীমের ১০০ বৎসর বয়সে তাহার পুত্র ইসহাকের জন্ম হয়”। বাইবেল আদি পুস্তুক ১৭ঃ২৪ এ বলা হয়েছে “ইব্রাহীমের লিঙ্গাগ্রের ত্বক ছেদন কালে (খৎনা করার সময়) তাহার বয়স ৯৯ বৎসর”। ঐ বাইবেল থেকে একথাও প্রমানিত পিতার সাথে পুত্র ইসমাঈলকেও খৎনা করানো হয় । খৎনা করা কালে ইসমাঈলের বয়স ছিলো ১৩ বৎসর । বাইবেল থেকেই প্রমানীত ইব্রহীমের (আঃ) বয়স যখন ১০০ তখন ইসহাকের জন্ম ,ঐ সময় ইসমাঈলের বয়স ১৪ বৎসর । অতএব বাইবেল দ্বারাই প্রমানীত ইসমাঈল ইসহাক অপেক্ষা ১৪ বৎসরের বড় (  দেখুন ববাইবেল আদি পুস্তুক কোরবানী অধ্যায়) । ফলে ইসহাক কোন দিনই ইব্রাহীমের একমাত্র বা অদ্বিতীয় পুত্র ছিলেন না । আরও প্রমানীত হলো বাইবেলের এক শ্লোক অপর শ্লোকের বিপরিত ফলে বাইবেল প্রমান হওয়ার উপযুক্ত নয় ।বর্তমান সমাজে বাইবেল বলতে যে বই পাওয়া যায় তা বিকৃত , মিথ্যা ,কোন কথার প্রমান হওয়ার উপযুক্ত নয় । সঠিক কথা হলো যবীহুল্লাহ ইসহাক নয় ইসমাঈল ।
কোরআনের আলোকে যবীহুল্লাহ ঃ- 
(১) সুরা সফ্ফাত ১০০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-  সিরিয়ার প্রবাস জীবনে নিঃসন্তান ইব্রাহীম আঃ আল্লাহর নিকট সন্তান কামনা করে দু‘আ করেন ,তাকে একটি ধৈর্যশীল সন্তান দান করা হয় ,এটাই তার প্রথম সন্তান । এই সন্তানটিই তিনি কোরবানী করেন । তাফসিরে ইবনে কাসির ৩/১৮৬ ;ও তাফসিরে কবীর ২৬/১৫৪ পৃষ্টায় বলা হয়েছে ,মুসলীম ,ইয়াহুদী ও খৃস্টান সকলেই এ কথার উপর একমত যে ,ইসমাঈল ইসহাক অপেক্ষা বড় ।
(২) পবিত্র কোরআনের সুরা ছফ্ফাতের ১১৩ আয়াতে বলা হয়েছে - و باركنا عليه و على اسحاق   এখানে عليه  এর জমীর দ্বারা ঐ সন্তান কে বুঝানো হয়েছে যিনি ইসহাক ভিন্ন অন্য কেও ,এবং তাকেই যবেহ করা হয়েছিলো । ইসহাক ভিন্ন অন্যজন যে ইসমাঈল তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
(৩) পবিত্র কোরআনে যেখানে ইসহাকের বর্ননা আসছে সেখানে গোলামে আলীম (غلام عليم) বলা হয়েছে ,আর যেখানে ইসমাঈলের কথা আসছে সেখানে গোলামে হালীম (غلام حليم) বলা হয়েছে । আর কোরবানী যাকে করা হয়েছে তাকে সুরা সফ্ফাত ১০১ আয়াতে  গোলামে হালীম বলা হয়েছে । ইহাথেকে প্রমানীত হয় যবীহুল্লাহ গোলামে হালীম অর্থাৎ ইসমাঈল ।



হাদিসের আলোকে যবীহুল্লাহ ঃ-
(১) রসুল সঃ বলেছেন  انا ابن ذبيحين    আমি দুই যবীহ এর পুত্র । 
এ কথা বলে রসুল সঃ বুঝায়েছেন নবী ইসমাঈল আঃ যিনি আরবদের পিতা ,এবং আঃ মোত্তালেব যিনি  রসুলের বাবা আব্দুল্লাহর পিতা  উভয়ি যবীহুল্লাহ ছিলেন ।দেখুন কানজুল উম্মাল ১২/ ১৭২ পৃষ্টা- عن الحكم بن الحارث السلمى عن الصنابحى قال حضرنا معاوية بن ابى سفيان فتذاكر القوم الذبيح فقال بعض القوم اسماعيل الذبيح و قال بعضهم بل اسحاق الذبيح فقال معاوية سقتم على الخبير كنا عند رسول الله صلعم فأتاه اعرابى فقال يا ابن الذبيحين قال فتبسم النبى صلعم و لم ينكر عليه এই হাদিসটি একাধিক নির্ভরযোগ্য হাদিস ও তাফসিরের কিতাবে বর্নিত আছে । এ থেকে প্রমানীত হয় স্বয়ং রসুল দাবী করতেন তিনি  দুই যবীহুল্লাহর সন্তান,  অন্যরাও তাকে   দুই যবীহুল্লার পুত্র বলেছেন তিনি তা মেনেও নিয়েছেন ।এতে প্রমানিত হয় ইব্রাহীম আঃ এর পুত্র ইসমাঈলই ছিলেন যবীহুল্লাহ । কারন তিনিই আরবদের পিতা ,তিনিই নবী মোহাম্মদের (সঃ) পিতা ( পুর্ব পুরুষ)। 
ঐতিহাসিক প্রমান ঃ-
(১) ইব্রাহীমী  আদর্শ বাস্তবায়ন করে শত শত বছর থেকে ইব্রাহীম যে মিনায় কোরবানী করেছিলেন সেখানে হজ্জ মৌসুমে কোরবানীর প্রচলন চলে আসছে । এটা শুধু বনি ইসমাঈলদের মাঝে বিদ্যমান , বনি ইসহাক অতিতেও কোনদিন এ কোরবানী করেনি ,বর্তমানেও করেনা । এতে প্রমানীত হয় ইসমাঈলই যবীহুল্লাহ (তাফহিমুল কোরআন)  ।
(২) ইসমাঈলের মা হাজেরা ও ইসমাঈল যে কাবা গৃহের প¦ার্শে বাস করতেন ,ইসমাঈলের পরিবর্তে  যবেহ কৃত ভেড়ার শিং হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাবা ঘর জালায়ে দেয়ার পুর্ব পর্যন্ত কাবা ঘরে ছিলো , যবীহুল্লাহ ইসহাক হলে ঐ যবেহকৃত পশুর শিং ইসহাকের বসবাসস্থল বাইতুল মাকদাসে থাকত । যবীহুল্লাহ ইসমাঈল হওয়ার এটাও ঐতিহাসিক প্রমান ।
শেষ কথা ঃ- 
কোরআন, হাদিস ও আরবদের সঠিক ইতিহাস এ কথার উজ্জল প্রমান যে নবী ইব্রাহীমের (আঃ) প্রথম পুত্র ইসমাঈল (আঃ)  ছিলেন যবীহুল্লাহ । আরব ও বনী ইসমাঈলের চির শত্রু মিথ্যাবাদি  ইয়াহুদিরা কখনও এই সত্যকে মেনে নেয়নি । ইসহাক (আঃ) কে যবীহুল্লাহ প্রমান করার জন্যে তারা মিথ্যা ও কুট কৌশলের আশ্রয় নিতে একটুও দ্বিধা করেনি । বিশিষ্ট ইয়াহুদি পন্ডিত কাব আহবারের (রাঃ) প্ররোচনায় (যিনি পরবর্তীতে মুসলমান হয়ে ছিলেন) বেশ কিছু সাহাবায়ে কেরামও বিশ্বাস করতেন যবীহুল্লাহ ইসহাকই ছিলেন । এদের মধ্যে অনেকেই ভুল বিশ্বাস পরিত্যাগ করে সঠিক আকিদায় ফিরে আসেন । হিবরুল উম্মা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এদের মধ্যে একজন । তিনি পুর্ব ভ্রান্ত ধারনা পরিহার করে মন্তব্য করেন “ ইয়াহুদিরা ধারনা করে যে , তিনি (যবীহুল্লাহ) ইসহাক ছিলেন , ইয়াহুদিরা মিথ্যা বলেছে ”। زعمت اليهود انه اسحاق و كذبت اليهود   - ( সীরাত বিশ্বকোষ-১/৪৭১ পৃঃ)।
এটাই সত্য যে , ইব্রাহীম আঃ এর প্রথম পুত্র ইসম্ঈাল কে তার মা হাজেরা সহ মক্কায় রেখে যাওয়া হয় , তিনি মক্কার ঘর নির্মান ও আবাদ করেন , তিনি আরবদের পিতা, পিতা ইব্রাহীম স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে তাকে মিনায় কোরবানী করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন । ফলে ইসমাঈল কে বলা হয় যবীহুল্লাহ । ইব্রাহীমের (আঃ) দ্বিতীয় পুত্র ইসহাক তার মা ছারার সাথে ফিলিষ্থিনে বাস করতেন ,তিনি ইয়াহুদিদের পিতা যিনি বাইতুল মাকদাস নির্মমান ও আবাদ করেন । তিনি কখনও মক্কা আসেননি । কোরবানী সংক্রান্ত কোন ঘটনা তার সাথে ঘটেনি ।



মুফতি আব্দুল্লাহ খান ফয়েজী 
সহঃ অধ্যাপক, সানন্দবাড়ী সিঃ মাদ্রাসা 
খতিব, স্লুইজ গেট জামে মসজিদ 
০১৭২৫১৮৩২৪৫/০১৮৩৫১৮৩২৪৫

No comments:

Post a Comment

প্রচলিত মুনাজাত ও তার হুকুম

ভারত উপমহাদেশে বিভিন্ন মসজিদে বেশ কিছুদিন থেকে ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত চালু হয়ে আসছে । ফরজ সালাতের সালাম ফিরানো...