হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা'আলার এই কথা যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাব্বুল আলাইহিস সালাম!
আরবী হিসাব অনুযায়ী বছরের বৎসর মাসে প্রথম মাস মহরম .চারটি সম্মানিত মাসে মধ্যে মহরমাম এক। মরহম মাস দশ তারিখকে বলা হয় ইয়ায়োমুলআশুরা বা আশুরার দিন। আদম থেকে রহমত আলম (সঃ) পর্যন্ত যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছিলেন, দশ মরহুমের স্মৃতি প্রায় সবের জীবন নিয়ে কমবেশী জড়িত। কথিত আছে প্রথম মানুষ, প্রথম নবী, আবুল বাশার, আদম (আঃ) কে তৈরির জন্য প্রথম মাটি জমা দেওয়া মরহম মাস দশ তারিখ। প্রথম রসূল, মানবজাতির দ্বিতীয় পিতা, নুহ (আঃ) এর কস্তি প্রথম মাটি স্পর্শ করে এবং তিনি অবতরণ করেন মরহম মাস দশ তারিখ। বনী ইসরাঈল প্রসিদ্ধ নবী কালীমুল্লাহ, মুসা (আঃ) এবং তার অনুসারীগণ ফেরাউন কবল থেকে আল্লাহ তায়ালা রক্ষা করেন 10 তারিখ (বখারী)। 61 হিজরী সনে স্বীয় জামনার সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, রসুল (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র, নবী কন্যা ফাতেমা (রাঃ) এর কলিজার টুকরা,হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) এর শাহাদাত সংঘটিত মরহম মাস 10। সবিজ্ঞান উলামায়েকের এথার উপর একমত যে, নবীদের স্মৃতি বিজড়িত মরহম মাস দশ তারিখে হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত সংঘটিত হওয়ায় শাহাদাতের মৃত্যুর শত শত বৃদ্ধি পেয়েছে। হুসাইন (রাঃ) আশুরার দিন শাহাদত বরন করায় আশুরার দিন মর্তব বাহরেনি বেড়েছে তার শাহাদাত মর্তবা।
আশুরার আমলঃ: আশুরার আমল হিসাবে দুইটি আমল প্রচলিত আছে (1) আশুরার দিন (মহরমাম মাস 10 তারিখ) রোজ রাখা, (২) পরিবার পরিজনদের জন্য ভাল খাবার ব্যবস্থা করা। প্রথমটি আখেরাতে ছওয়াবের জন্য এবং দ্বিতীয়টি দুনিয়ার লাভের জন্য। তবে হ্যাঁ, এই দ্বিতীয় কাজটি যদি কেউ ছায়াবার নিয়ন্ত্রিত তবে তা পাপ হবে।
(1) রোযা রাখাঃ- মরহম মাস নয় দশ বা দশ ইগার তারিখ রোযা রাখো ছাহহহ হাদিস দলিল প্রমাণিত।
* আম্মাজান আয়শা (রাঃ) বর্ননা, রামজান রোযা ফরজ হওয়ার পূর্বে আশুরার দিন (ফরজ) রোযা রাখা হতো, যখন রোযাওয়ান রোযা ফরজ করা হতো তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করলেন, রোযার আশার ইচ্ছা নেই। (বোখারী-তিরমিযী)।
عن عائشة قالت كان عاشوراء يوما تصومه قريش في الجاهلية وكان رسول الله صلى الله عليه و سلم يصومه فلما قدم المدينة صامه وأمر الناس بصيامه فلما افترض رمضان كان رمضان هو الفريضة وترك عاشوراء فمن شاء صامه ومن شاء تركه وفي الباب عن ابن مسعود و قيس بن سعد و جابر بن سمرة و ابن عمر و معاوية قال أبو عيسى والعمل عند أهل العلم على حديث عائشة وهو حديث صحيح رواه الترمذى عن عائشة رضي الله عنها قالت : كان عاشوراء يوما تصومه قريش في الجاهلية وكان النبي صلى الله عليه و سلم يصومه فلما قدم المدينة صامه وأمر بصيامه فلما نزل رمضان كان من شاء صامه ومن شاء لا يصومه رواه البخا
* ইবনে আব্বাস রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইয়াহুদীদের আশ্রয়ের দিন রোযা রেখেছিলেন, তখন তাদের রোযা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হল, তারা সান্নিধ্য দিবস, আজকে আল্লাহ তায়ালা মুছা (আঃ) এবং তাঁর সম্প্রদায়কে রক্ষা করুন, ফেরাউন ও তার দলকে ডুবিয়ে পানির পানি। এই দিন মুছা (আঃ) রোযা রেখেছে, তাই আমরা রোযা রেখেছি, রসূল (সাঃ) বল্লেন মুছার (আঃ) সহকারে ভাল ব্যবহার করা হকদার আমরা বেশী। এরপর থেকে রসূলও রোযা রাখতেন এবং উম্মতের আদেশ পালন করতেন।
عن ابن عباس: أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم-قدم المدينة فوجد اليهود صياما يوم عاشوراء। فقال لهم رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: ما هذا اليوم الذى تصومونه? গ্ধ। فقالوا: هذا يوم عظيم أنجى الله عز وجل فيه موسى وقومه وغرق فيه فرعون وقومه। فصامه موسى شكرا فنحن نصومه। فقال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: فنحن أحق وأولى بموسى منكم গহ। فصامه رسول الله -صلى الله عليه وسلم- وأمر بصيامه। رواه البخارى فى الصحيح عن على بن المدينى عن سفيان ورواه مسلم عن ابن أبى عمر।
* অন্য এক হাদিস আসছে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রাখেন এবং লোকদের রোযা রাখার আদেশ দেন, লোকেরা জানায়, ইয়াহুদী ও নাশরাতঃ এই দিন কে সম্মান করে রোযা রাখে, তখন রসূল বললে আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি (ইহুদীদের জন্য মোখালাফত) দশ তারিখ নয় তারিখও রোযা রাখবো (রসুল (সঃ) আগামী বছর পর্যন্ত হায়াত পাননি) (মুসলিম)।
عن ابن عباس قال: حين صام رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم عاشوراء وأمر بصيامه قالوا: يا رسول الله إنه يوم يعظمه اليهود والنصارى। فقال رسول الله صلى الله عليه و سلم: "لئن بقيت إلى قابل لأصومن التاسع"। رواه مسلم
* আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত রসূল (সাঃ) বলেছেন, রোযাআন রোযার পরে উত্তম রোযা মরহম মাস রোযা (তিরমিযী-মুসলিম)।
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم * أفضل الصيام بعد شهر رمضان شهر الله المحرم وأفضل الصلاة بعد الفريضة صلاة الليل قال وفي الباب عن جابر وبلال وأبي أمامة قال أبو عيسى حديث أبي هريرة حديث حسن صحيح رواه الترمذى و ابو داؤد عن أبي হযরত রা। হযরত উসমান রা। হযরত উমর রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর রসূল! وبة الصلاة في جوف الليل وأفضل الصيام بعد شهر رمضان صيام شهر الله المحرم رواه المسلم
* অন্য এক হাদিস আসছে মরহম মাস দশ তারিখ রোযায় এক বছর পাপাফ মাফ হযরত আবু দাউদ।
হযরত উমর রা। রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রা। থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
এই হাদিস গুলির সামনে রাখলে মরহম মাস দশ এবং দশের সাথে নয় অথবা এগার তারিখ মিলায়য়ে দুইটি নফল রোযার প্রমাণ মেলে। ছহীহ হাদিসের আলোতে আশুরার আমল হিসেবে একটি মাত্র আমল প্রমাণিত হয়, আর তা হচ্ছে রোযা রাখা।
(২) দশ তারিখ পরিবার পরিজনদের উন্নত খাবার ব্যবস্থা করা। এ সম্পর্কে যে হাদিস আছে এটা হল -
عن عبد الله ابن مسعود قال قال النبي صلى الله عليه و سلم: من وسع على عياله يوم عاشوراء وسع الله عليه في سائر سنته تفرد به هيضم عن الأعمش رواه البيهقى وقال فيه الهيصم بن الشداخ وهو ضعيف جدا عن ابن مسعود قال: قال رسول الله صلى রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান রা। থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর রসূল! হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহর রসূল!
আশুরার দিন যারা নিজেদের পরিবার-পরিজনদের জন্য সভ্যতা (ভাল খবর) ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ তায়ালার সাথে তাদের সারা বছর বজায় রাখতে হবে (আল মু'জামুল কবীর, বায়হাকী, তাবারানী, কানজুল উম্মাল)।
পর্যালোচনা - জাল-ইবনে তাইমিয়া হাদিসটি জাল (হাদীস নং) বলেছেন। জাইফ-ইমাম তাবারানী, ইমাম বায়হাকী, ইবনে হিব্বান ও আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দা বলেছেন, হাদিসটি জাল না বরং জাইফ (দুর্বল)। হযরত আ। রা। হযরত আবদুল হাই লকোনিভি, মোল্লা আলী কারী, ইমাম সুয়াতেীর নিকট হাদীসটি দুর্বল হলেও সনদে বর্ণিত হয়েছে, হাসান পর্যায়।
আমাদের কথা- যেহেতু হাদীসটিকে কেউ জাল বলেছে, কেউ কেউ, কেউ হাসান, তাই ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যদি বিশ্ব লাভ লাভের আশায় অর্থ পূর্ণ হয়, তবে তার পরিবারের সদস্যরা উন্নত খানের ব্যবস্থা করতে পারে, করুক। এবিপারে তাকে উত্সাহিত করবেন না।
কোন কোন এলাকায় কোন কোনও সমাজের আশুরার শিন্নি নাম দিয়ে, সামাজিকভাবে চাঁদা করে গরু-গরুর মাংস, ছাগল-ভেড়া জবেহ করে ভুড়িভোজ ব্যবস্থা করা হয় এবং এজেক ছওয়াব বা বরকত মনে হয়। ইসলামী শরীআতের দৃষ্টিতে পবিত্র মরহম মাস এই শিন্নি হারাম, কেননা এই শিন্নি শিয়াদের আমল সুন্নী না, তা যে দিন যে নিয়তে হোক না কেন। মরহম মাস শিন্নি যে দিন হোক হোক না কেন, যে নামকরণ করা হোক না কেন জবেহ করা পশুদের মাংস হারাম, এই অনুষ্ঠান বেদাত এই বেদআত কর্মে যারা অংশ গ্রহন করবে, উৎপাদন করবে এই বেতাদ কর্মথেকে তৌব্ব আগে তাদের মৃত্যুর পরে তারা জাহান্নামে যাবে। এরা তৌবা করতে তাদের নামায রোযা, হজ্ব-জাকাত দান-ছাদকা এক কথায় কোন ইবাদতই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা (বখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাযা)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ তা'আলার এই কথা যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাব্বুল আলাইহিস সালাম রাহমানী হযরত উমর রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হযরত উমর রা। রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ কি জানেন?
যে সব উলামায়ে কেরাম সামাজিক এই সব বেদাত কর্মে বাধা দেয় না বরং সমাজের দশজনকে সাথে মিলিয়ে অংশ নেয় তারা সমাজের অন্য দশজনের তুলনায় বেশি গুণগান করে, হাদিসের ভাষা এই সকল লোককে উলামায়েসু, শয়তানুন আখরাস (বব শয়তান)।
عن أبي سعيد الخدري قال أخرج مروان المنبر في يوم عيد ولم يكن يخرج به وبدأ بالخطبة قبل الصلاة ولم يكن يبدأ بها قال فقام رجل فقال يا مروان خالفت السنة أخرجت المنبر يوم عيد ولم يكن يخرج به في يوم عيد وبدأت بالخطبة قبل الصلاة ولم يكن يبدأ بها হযরত আবু হুরাইরা রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রা। থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান রা। থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!
মুনকারাতে আশুরাঃ - সম্প্রতি কালে শিয়াদের থেকে আমাদের সমাজে, আশুরা সম্পর্কিত বেশ কিছু আকিদা ও আমল অনুপ্রবেশ ঘটেছে যার প্রায় সবই মুনকার মানে নন্দনীয়, পরিণাম। কোন কোনটা র্শিক, কোনটা বেদাত। সবগুলোই অবশ্যই বর্জনীয়। যেমন: (1) মরহম মাস কে খারাপ বা মনহুস মনে করা। (2) তাজিয়া বানানো। (3) শোক পালন করা। (4) রং মেক শোক মিছিল করা। (5) ইছল ছওয়াবের নিয়তে খানা বিতরন করা। (6) বিশেষ নিয়মাবলী সালাত আদায় করা। (7) ঢাল তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলোয়াড়রা। (8) আতশ বাজি করা। (9) হোসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত ঘটনা বর্ণনা করা আবশ্যক।
শেষ কথাঃআশুরা একটি মহা পবিত্র দিন। রোজা রাখুন ছড়া আশশুরা সম্পর্কিত কোন আমল ইসলামী শরীআতে নাই। রোজা রাখা ছড়া আশুরার আমল মনে করে যিকছুছু করা হবে সবই বেদাত, আর বেদাত পরিণতি জাহান্নাম (মেশকাত -30 পৃষ্টা)।
মুফতি আবদুল্লাহ খান ফয়েজী
সহঃ অধ্যাপক সানন্দ বাড়ী সিনিয়ার মাদ্রাসা
017২5183২45
No comments:
Post a Comment