কোরবানীর
ইতিহাস ও তাৎপর্য
بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿الكوثر: ١﴾فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ﴿الكوثر:
٢﴾إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ ﴿الكوثر: ٣﴾
ভুমিকাঃ-
কোরবানীর দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন, আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলে করিম (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ’র নিকট দিবস সমুহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হলো কোরবানীর দিন, তারপর পরবর্তী ৩ দিন।মুসলিম উম্মাহ’র জন্য ঈদুল আযহার দিন ও পরবর্তী ৩ দিন অতি তাৎপর্যপূর্ণ ও অতি মর্যাদা সম্পন্ন। ঈদুল আযহার দিনে সালাত
আদায়ের পাশাপাশি পশু কোরবানী মুসলমানদের জন্য
একটি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত এবং আনন্দময় উৎসব।ঈদুল আযহা ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও মর্যাদা
সম্পন্ন, কেননা এদিনে সালাত ও কোরবানী একত্র করা
হয়। যা ঈদুল ফিতরের সালাত ও সদকাতুল ফিতরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় হাবীব মুহাম্মদ (সাঃ) কে কাওছার দান করেছেন, এর শুকরিয়া আদায়ে তিনি তাকে কোরবানী ও
সালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
কোরবানীর অর্থ : আমাদের সমাজে প্রচলিত কোরবানী শব্দের অর্থ হচ্ছে,
নিকটবর্তী হওয়া বা সান্নিধ্য লাভ করা। আল কুরআনে
সূরা আল মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে-
وَاتْلُ
عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ إِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا
فَتُقُبِّلَ مِنْ أَحَدِهِمَا وَلَمْ يُتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ قَالَ
لَأَقْتُلَنَّكَ قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ ﴿المائدة: ٢٧﴾
ইজ ক্কাররাবা-ক্কুরবা-নান’
অর্থাৎ যখন তার দু‘জনে কোরবানি পেশ করলো বা পশু জবাই
করলো। সূরা আল কাওসারে বলা হয়েছে, ‘ফাছল্লি লিরাববিকা ওয়ানহার’ অর্থাৎ অতএব, (হে নবী!) আপনার ‘রব’ এর স্মরণে সালাত আদায় করুন ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্যে কোরবানি করুন’। এখানে ‘নাহার’ বলতে কোরবানি বোঝানো হয়েছে। আসলে ‘নাহার’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, নহর, বিশেষ নিয়মে জবাই করা।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللَّهُ
عَنْهُمَا فِى قَوْلِهِ (وَانْحَرْ) قَالَ يَقُولُ : فَاذْبَحْ يَوْمَ النَّحْرِ- ابن كثير
কোরবানী কি ?
কোরবানীর বিধান মানব ইতিহাসের মতো অতি প্রাচীন,সকল নবীর
যুগেই কোরবানীর প্রচলন ছিলো। হযরত আদম (আঃ) এর দু‘পুত্র হাবীল ও কাবীলের কোরবানীর মাধ্যমে কোরবানীর সূচনা হয়। প্রথম যুগে কোরবানীর নিয়ম ভিন্ন ছিল, ভেড়া, দুম্বা, শষ্য বা গম আল্লাহ’র দরবারে পেশ করা হতো, যার কোরবানী কবুল হতো আল্লাহ’র হুকুমে আকাশ হতে আগুন এসে তা ভষ্মিভূত করে দিত, আর যারটা কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকতো।
মুসলিম জাতির জনক ইব্রাহীম (আঃ)স্বীয় প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী
করার পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে কোরবানীর সোনালী ইতিহাস তৈরী করে গেছেন।ইসমাঈল (আঃ) নিজের জানকে আল্লাহ’র রাহে উৎসর্গ করতে নির্দ্ধিধায় সম্মত
হয়ে আত্নত্যাগের এক অবিস্মরনীয় দৃষ্টান্ত
স্থাপন করেছেন।
ইব্রাহীম (আঃ)
স্বপ্নযোগে আল্লাহ’র পক্ষ থেকে প্রিয় বস্তু,প্রিয় পুত্র কোরবানী করার আদেশ লাভ করেন।
পর্যায়ক্রমে তিন
রাত স্বপ্ন দেখে তিনি বুঝতে পারলেন
তার প্রাণপ্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে
আল্লাহ’র সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে হবে।
ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রতি এটা ছিল আল্লাহ’র পক্ষথেকে বড় পরীক্ষা এবং পৃথিবীর বুকে স্রষ্টার প্রেমে সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ট কোরবানী।
ইব্রাহীমী ত্যাগের সু-মহান ও অনুপম দৃষ্টান্ত,পুত্র
কোরবানীকে চিরস্মরনীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় রাসুল মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের উপর পশু
কোরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আঃ) কে কোরবানী করা ছিল ইব্রাহীম (আঃ) এর
জীবনের অসংখ্য কোরবানীর শ্রেষ্টতম ঘটনা।
পবিত্র ঈদুল আযহার দিনে আল্লাহ’র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সালাত আদায়ের পাশাপাশি পশু কোরবানী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং ইব্রাহীমী
সুন্নত। বালিগ,
মুকিম ও সামর্থবানদের মধ্যে যারা ১০ জিলহজ্ব ফজর হতে ১২ জিলহজ্ব সন্ধ্যা
পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক
হবে(৫০০০০ টাকা) তার উপর কোরবানী ওয়াজিব (মতান্তরে
সুন্নত)। কোরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য যাকাতের
নিসাব পরিমান সম্পদ পুরো এক বছর নিজ আয়ত্বে থাকা শর্ত নয়, বরং যে অবস্থায় সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব
হয় ঐ অবস্থায় কোরবানী করাও ওয়াজিব হয়।
কোরবানীর ফজিলত
কোরবানীর
ফজিলত ও সওয়াব
সম্পর্কে হাদিস শরীফে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا
أَنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ : « مَا عَمِلَ
ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلًا أَحَبَّ إلَى
اللَّهِ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَتَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ
بِقُرُونِهَا وَأَظْلَافِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنْ
اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الْأَرْضِ فَطِيبُوا
بِهَا نَفْسًا » . رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ
وَالتِّرْمِذِيُّ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
و فى رواية من إهراق
الدم
কোরবানীর ঈদের দিন আদম সন্তান যে সকল আমল করে তার মধ্যে আল্লাহ’র নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো,
কোরবানীর পশুর
রক্ত প্রবাহিত করা। কোরবানীর পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, নাড়িভূড়ি ও চুল-পশম নিয়ে উপস্থিত হবে।
আর তার রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই
আল্লাহ’র নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা তা আনন্দের সাথে পালন করো (তিরমিযী,ইবন মাজাহ)।
অন্য একটি হাদিসে এসেছে-
عن زيد بن أرقم قال : قال أصحاب رسول
الله صلى الله عليه و سلم : يا رسول الله ما هذه الأضاحي ؟ قال : " سنة
أبيكم إبراهيم عليه السلام " قالوا : فما لنا فيها
يا رسول الله ؟ قال : " بكل شعرة حسنة " . قالوا : فالصوف يا رسول الله
؟ قال : " بكل شعرة من الصوف حسنة " رواه
أحمد وابن ماجه (في الزوائد في إسناده أبو داود . واسمه نفيع بن الحارث .
وهو متروك . واتهم بوضع الحديث . ضعيف جدا ) عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ
رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُمْ قَالُوا لِرَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-
: مَا هَذِهِ الأَضَاحِىُّ؟ قَالَ :« سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ
السَّلاَمُ ». قَالُوا : مَا لَنَا فِيهَا مِنَ الأَجْرِ؟ قَالَ :« بِكُلِّ
قَطْرَةٍ حَسَنَةٌ ».رواه البيهقى
রাসুল (সাঃ) কে কোরবানী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, এটা হলো তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত। তারা বলেন এর বিনিময়ে আমাদের জন্য কি রয়েছে? রাসুল (সাঃ) বলেন প্রতিটি চুলের জন্য রয়েছে একটি নেকি। তারা বলল, ভেড়ার পশমের কি হবে? তিনি বললেন, ভেড়ার প্রতিটি পশমের জন্যেও রয়েছে একটি করে
নেকি (ইবন মাজাহ,আহমাদ)।বায়হাকীর বর্ননায় আসছে রক্তের প্রতি ফোটার বিনিময়ে রয়েছে
একটা করে ছওয়াব।
কোরবানীর শিক্ষা
পৃথিবীতে মানুষের কাছে আকর্ষণীয়-লোভনীয়
বস্তুর মধ্যে অর্থ-সম্পদ আর সন্তান-সন্তুতি অন্যতম। এই অর্থ-সম্পদের
মোহ ত্যাগের মানসিকতা সৃষ্টি করাই হচ্ছে কোরবানির শিক্ষা। কোরবানী হলো নিজের ভিতরের পশু সত্বাকে জবেহ করা। কোরবানি আমাদের
ঈমান ও তাকওয়া বৃদ্ধি করে ও পরকালের
প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। রাসূল (সা.) নির্দেশ করেছেন, হে লোকসকল তোমরা ত্র“টিমুক্ত ও উত্তম প্রাণি কোরবানি করো,
কারণ কোরবানির এ পশুগুলো হবে তোমাদের জান্নাতে যাওয়ার
বাহন’(বায়হাকি)।
কোরবানির হুকুম
কোরবানী ওয়াজিব না সুন্নত ? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।
প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব-
ইমাম আবু হানীফা রহ. ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, প্রমুখের মত এটাই। আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব বলেছেন।দলিল--
(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন –
بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ ﴿الكوثر: ١﴾فَصَلِّ لِرَبِّكَ
وَانْحَرْ ﴿الكوثر:
٢﴾إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ ﴿الكوثر: ٣﴾
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর (কাওসার)। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(দুই) রাসূলে কারীম স. বলেছেন-
عن
ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه
وآله من وجد سعة لان يضحى فلم يضح فلا يحضر مصلاناالمستدرك عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَارواه احمد
‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে( আহমাদ,
ইবনে মাজা)।যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি কঠোর সতর্ক-বাণী। আর এত কঠোরতা ওয়াজিব এর ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে,তাই কোরবানি ওয়াজিব।
(তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন-
عن مِخْنَفُ بْنُ
سُلَيْمٍ قَالَ وَنَحْنُ وُقُوفٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-
بِعَرَفَاتٍ قَالَ « يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ عَلَى كُلِّ
أَهْلِ بَيْتٍ فِى كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَةً
وَعَتِيرَةً أَتَدْرُونَ مَا الْعَتِيرَةُ هَذِهِ الَّتِى يَقُولُ النَّاسُ
الرَّجَبِيَّةُ ». رواه
الترمذي وأبو داود والنسائي وابن مامجه قَالَ أَبُو دَاوُدَ الْعَتِيرَةُ مَنْسُوخَةٌ قال أبو عيسى هذا حديث
حسن غريب ضعيف
الإسناد ولا نعرف هذا الحديث إلا من هذا الوجه قال الشيخ وهذا
صفة الوجوب وقال صلى الله عليه وسلم من وجد سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا ومثل هذا الوعيد لا يليق إلا بترك الواجب انتهى
হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি দেয়া (তিরমিযী,আবু দাউদ,নাসাঈ, আহমাদ,
ইবনে মাজা)।
(৩) রাসূল (সা.) বলেছেন-
عن عائشة أن النبي صلى الله
عليه و سلم قال : ما عمل ابن آدم عملا يوم النحر أحب إلى الله من هراقة دم وإنه
ليأتي يوم القيامة في قرنة عليها قرنها وأشعارها وأظلافها وإن الدم ليقع من الله
بمكان قبل أن يقع بالأرض فطيبوا بها نفسا رواه
البيهقى
عن عائشة قالت : قال رسول الله
صلى الله عليه و سلم : " ما عمل ابن آدم من عمل يوم النحر أحب إلى الله من
إهراق الدم وإنه ليؤتى يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها وإن الدم ليقع من
الله بمكان قبل أن يقع بالأرض فيطيبوا بها نفسا " . رواه الترمذي وابن ماجه
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে মানবসন্তানের কোনো নেক আমলই আল্লাহ
তায়ালার নিকট তত প্রিয় নয়, যত প্রিয় কোরবানি করা। কোরবানির পশুর শিং, পশম ও খুর কিয়ামতের দিন (মানুষের নেক আমলনামায়) এনে দেয়া হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে পৌঁছে যায়। সুতরাং তোমরা
আনন্দচিত্তে কোরবানি করো’ (তিরমিজি)এখানে ছিগায়ে আমর যা ওয়াজিব হওয়ার দাবী রাখে ।
দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ-
এটা ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-সহ অধিকাংশ উলামাদের মত। এ মতের প্রবক্তারা বলে থাকেন, সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা মাকরূহ।যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা, কোরবানি হল ইসলামের একটি মহান নিদর্শন।দলিল --
(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :
عَنْ سَعِيدِ بْنِ
الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ تَرْفَعُهُ قَالَ « إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ
وَعِنْدَهُ أُضْحِيَّةٌ يُرِيدُ أَنْ يُضَحِّىَ
فَلاَ يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلاَ يَقْلِمَنَّ ظُفُرًا وفي
رواية عن أم سلمة أن النبي
{صلى الله عليه وسلم} قال إذا رأيتم هلال ذي الحجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره
وأظفاره وفي رواية محمد بن عمرو الليثي عن عمر بن مسلم بن عمار بن أكيمة الليثي
عن سعيد عن أم سلمة قالت قال
رسول الله {صلى الله عليه وسلم} من كان له ذبحٌ
يذبحه فإذا أهل هلال ذي الحجة فلا يأخذن من شعره ولا من أظفاره شيئاً حتى
يضحي
‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি করতে চায়,
যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে (মুসলিম)।এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি করতে চায়’
কথা দ্বারা বুঝে আসে এটা ওয়াজিব নয়।
(দুই) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللَّهُ
عَنْهُمَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ : ثَلاَثٌ هُنَّ
عَلَىَّ فَرَائِضُ وَهُنَّ لَكُمْ تَطَوُّعٌ النَّحْرُ وَالْوِتْرُ وَرَكْعَتَا
الضُّحَى رواه البيهقى عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا رَفَعَهُ قَالَ :«
كُتِبَ عَلَىَّ النَّحْرُ وَلَمْ يُكْتَبْ عَلَيْكُمْ رواه
البيهقى
তিনটা কাজ আমার
উপর ফরজ কিন্ত তোমাদের উপর নফল আর তা হলো ,কোরবানী,ছলাতে
বিতর ও ছলাতে এশরাক।অপর হাদিসে আসছে ,কোরবানী আমার উপর ওয়াজিব তোমাদের উপর নয় (বায়হাকী)।
(তিন) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে কোরবানি ওয়াজিব নয়।
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ
وَأَبِى هُرَيْرَةَ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمْ أَنَّ رَسُولَ
اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- صَلَّى لِلنَّاسِ يَوْمَ النَّحْرِ فَلَمَّا فَرَغَ
مِنْ خُطْبَتِهِ وَصَلاَتِهِ دَعَا بِكَبْشٍ فَذَبَحَهُ هُوَ بِنَفْسِهِ وَقَالَ
:« بِسْمِ اللَّهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ عَنِّى
وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِى رواه البيهقى
(চার) ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ ইবনে হাম্বল রঃ
বলেছেন,আবু বকর রাঃ ও ওমর রাঃ কখনো কখনো ইচ্ছা করে কোরবানী করা থেকে বিরত থাকতেন এটা
বুঝানোর জন্যে যে কোরবানী ওয়াজিব নয়।
قَالَ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللَّهُ :
وَبَلَغَنَا أَنَّ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقَ وَعُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُمَا
كَانَا لاَ يُضَحِّيَانِ كَرَاهِيَةَ أَنْ يُقْتَدَى بِهِمَا فَيَظُنُّ مَنْ
رَآهُمَا أَنَّهَا وَاجِبَةٌ. رواه
البيهقى
عَنْ حُذَيْفَةَ
بْنِ أَسِيدٍ قَالَ : لَقَدْ رَأَيْتُ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِىَ اللَّهُ
عَنْهُمَا وَمَا يُضَحِّيَانِ عَنْ أَهْلِهِمَا خَشْيَةَ أَنْ يُسْتَنَّ بِهِمَا رواه البيهقى
শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয় বরং একটা অন্যটার সম্পূরক। সারকথা হল যারা কোরবানিকে ওয়াজিব বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মত এটাই।
ফয়েজী
No comments:
Post a Comment