ইসলামী শারী'আতের নীতি হচ্ছে এই যে, যে কোন মুসলিম সাওয়াবের আশায় ইবাদাত হিসেবে কিছু করতে চাইলে অবশ্যই যা করতে চাচ্ছে তার সমর্থনে কুরআন-হাদীস থেকে দলীল থাকতে হবে। যদি দলীল থাকে তাহলে তা হবে ইবাদত আর ইবাদতের বিনিময়ে হবে ছওয়াব পাবে জান্নাত, আর যদি দলিল না থাকে করা যাবে না,করলে বেদাত হবে, গুনাহ হবে আর এর বিনিময় জাহান্নামে যেতে হবে।
মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করা প্রমান ভিত্তিক ইবাদত না বেদাত তা খতিয়ে দেখা দরকার।অনুসন্ধান করলে জানা যাবে, কোরবানী এমন একটি ইবাদত যা জীবিতের সাথে সংশ্লিষ্ট মৃত্যের সাথে নয় যেমন এরশাদ হচ্ছে-
عن ابى هريرة
رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وآله من وجد سعة لان يضحى فلم يضح فلا يحضر مصلاناالمستدرك عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ
فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَارواه احمد
তোমাদের মধ্যে যে কোরবানী করার সামর্থ রাখে সে যেন কোরবানী করে,না করলে সে যেন ঈদগাহে না আসে। মধ্যদিনের আলোর মতই পরিস্কার রসুল সঃ এই হাদিসে জীবিতদের কোরবানী করতে বলেছেন ,মৃতুদের নয়।
তবে হা --------------মাসালাটি ব্যপক আলোচনার দাবী রাখে ,আসুন জানতে চেষ্টা করি-
(১) যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে, এবং তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে কুরবানী করা সম্ভব হয়, তাহলে মৃতের নামে কুরবানী করা ওয়াজিব।আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-
فَمَن بَدَّلَهُ بَعْدَمَا سَمِعَهُ فَإِنَّمَا إِثْمُهُ عَلَى
الَّذِينَ يُبَدِّلُونَهُ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ١٨١﴾
“অতঃপর যে ব্যক্তি তা শুনার পর অসীয়তে পরিবর্তন ঘটাবে, তবে তার গুনাহ তাদেরই উপর বর্তাবে, যারা তার পরিবর্তন ঘটাবে(বাক্বারা)।
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ حَدَّثَنَا شَرِيكٌ عَنْ أَبِي
الْحَسْنَاءِ عَنْ الْحَكَمِ عَنْ حَنَشٍ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي
بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ مَا هَذَا فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي
عَنْهُ. أبوداود
হানাশ বলেন : আমি আলী রাঃ কে দু'টি মেষ যাব্হ করতে দেখেছি। আমি তাকে বললাম এ কি? (অর্থাৎ দু'টি কেন?) তিনি উত্তরে বললেন : রসূল সঃ আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করার জন্য অসিয়্যাত করে গেছেন। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করছি(আবু দাঊদ, হাদীটিকে শাইখ আলবানী যয়ীফ বলেছেন)।
ইমাম তিরমিযীর ভাষাটি হচ্ছে নিম্নরূপ-
عن حنش عن على : أنه كان يضحى بكبشين أحدهما عن
النبي صلى الله عليه وسلم ، والاخر عن نفسه ، فقيل له ، فقال : أمرنى به - يعنى النبي صلى الله عليه وسلم - فلا أدعه أبدا . هذا حديث غريب لا نعرفه إلا من حديث شريك . وقد رخص بعض أهل العلم أن يضحى عن الميت . ولم ير بعضهم أن يضحى عنه . وقال عبد الله بن
المبارك : أحب إلى أن يتصدق عنه ولا يضحى وإن
ضحى فلا يأكل منها شيئا ويتصدق بها كلهارواه الترمذى
হানাশ আলী রাঃ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি (আলী) দু'টি মেষ কুরবানী দিতেন একটি নাবী এর পক্ষ থেকে আর দ্বিতীয়টি তার নিজের পক্ষ থেকে। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন : আমাকে নাবী তা করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। অতএব আমি কখনও তা ছাড়ব না (তিরমিযী,তিরমিযী বলেন : হাদীসটি গারীব)।
অসিয়াতের কোরবানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তি(অসিয়াতকারী) পাবে, এবং এর গোস্ত পুরোটাই গরীবদের মাঝে ছদকা করে দিতে হবে, যেমন ফতোয়া শামীতে আসছে –
(
قوله وعن ميت ) أي لو ضحى عن ميت وارثه بأمره ألزمه بالتصدق بها وعدم الأكل منها ، وإن تبرع بها عنه
له الأكل لأنه يقع على ملك الذابح والثواب للميت ، ولهذا لو كان على الذابح واحدة
سقطت عنه أضحيته كما في الأجناس . قال الشرنبلالي : لكن في سقوط الأضحية عنه تأمل
ا هـ . (رد المحتار، كتاب الاضحية- ، خانية
على الهندية، كتاب الاضحية(
যদি কেহ মৃতুর অসিয়াত
অনুসারে তার নামে কোরবানী করে ,মাংস নিজেরা খেতে পারবে না,ছদকা করতে হবে। যদি অসিয়াতকারী মৃত্যু ব্যক্তি কোরবানী করার মতো সম্পদ না রেখে যান ,যাকে অসিয়াত করেছে সে নিজের সম্পদ থেকে মৃত্যের (অসিয়ত পুরা করে) নামে কোরবানী করে ,এই কোরবানী বৈধ হবে,মৃতু ব্যক্তি(অসিয়াত কারী) ছওয়াব পাবে, মাংস কোরবানী দাতা খাবে (ফতোয়া শামী ,আলমগিরী)–
وان تبرع بها عنه له الاكل لانه يقع على ملك الذابح والثواب للميت ولهذا
لو كان على الذابح واحدة سقطت عنه اضحية، (رد المحتار، كتاب الاضحية- ، المحيط
البرهانى، كتاب الاضحية، الفصل السابع فى التضحية ( من ضحى عن ميت جاز الأكل منها والهدية والصدقة والاجر للميت للذابح (رد المحتار، كتاب الاضحية- ، بزازية على الهندية، كتاب
الاضحية، السابع فى الاضحية(
(২) যদি সন্তান নিজের নামে কোরবানী করে, এর ছওয়াব পিতা-মাতার জন্যে দেয় অর্থাৎ জীবিতদের পক্ষ থেকে কোরবানী দেয়ার সময় পরিবারের মৃতদেরও সওয়াবে ভাগিদার করার নিয়ত করে, এটা অধিকাংশের নিকট
বৈধ ,এই কোরবানী কোরবানী দাতার পক্ষ থেকে আদায় হবে,ছওয়াব মৃতু পিতা-মাতাও পাবে।এর মাংস সাধারন কোরবানীর ন্যায় ধনী-গরীব সকলেই খেতে পারবে। ।বৈধতার পক্ষে দলীল হল,হাদিসে আসছে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানী দিতেন ও বলতেনঃ-
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
-صلى الله عليه وسلم- أَمَرَ بِكَبْشٍ أَقْرَنَ يَطَأُ فِى سَوَادٍ وَيَبْرُكُ فِى
سَوَادٍ وَيَنْظُرُ فِى سَوَادٍ فَأُتِىَ بِهِ لِيُضَحِّىَ بِهِ فَقَالَ
لَهَا يَا عَائِشَةُ هَلُمِّى
الْمُدْيَةَ ثُمَّ قَالَ اشْحَذِيهَا بِحَجَرٍ فَفَعَلَتْ ثُمَّ أَخَذَهَا وَأَخَذَ الْكَبْشَ فَأَضْجَعَهُ ثُمَّ ذَبَحَهُ ثُمَّ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ
مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ ثُمَّ ضَحَّى بِهِ. أخرجه مسلم وأبو
داود والطحاوي والبيهقي
অর্থ: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি শিংযুক্ত দুম্বা উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন,
যার পা কালো, চোখের চতুর্দিক কালো এবং পেট কালো। অতঃপর তা কুরবানীর জন্য আনা হলো। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন,
হে আয়েশা! ছুরি নিয়ে আস,
তারপর বললেন,
তুমি একটি পাথর নিয়ে তা দ্বারা এটাকে ধারালো কর। তিনি তাই করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুরি হাতে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দিলেন। পশুটি যবেহ্ করার সময় বললেন,
“বিসমিল্লাহ, হে আল্লাহ তুমি এটি মুহাম্মাদ, তাঁর বংশধর এবং সকল উম্মাতে মুহাম্মাদীর পক্ষ থেকে কবুল কর”। এভাবে তিনি তা দ্বারা কুরবানী করলেন(মুসলিম,আবু দাউদ,ত্বহাবী,বায়হাকী)।অথচ পরিবারের অনেকেই ইতিপূর্বে মৃত্যু বরণ করেছিল।
عَنْ عطاء بن يسار يقول سألت أبا أيوب الأنصاري كيف كانت
الضحايا على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال كان الرجل يضحي بالشاة عنه وعن
أهل بيته فيأكلون ويطعمون حتى تباهى الناس فصارت كما ترى قال أبو عيسى هذا حديث حسن
صحيح وعمارة بن عبد الله هو مدني وقد روى عنه مالك بن أنس والعمل على هذا عند بعض
أهل العلم وهو قول أحمد وإسحاق واحتجا بحديث النبي صلى الله عليه وسلم أنه ضحى
بكبش فقال هذا عمن لم يضح من أمتي وقال بعض أهل العلم لا تجزئ الشاة إلا عن نفس
واحدة وهو قول عبد الله بن المبارك وغيره من أهل العلم رواه الترمذى وقال هذا
حديث حسن صحيح . قال والعمل على هذا عند بعض أهل العلم . وهو قول أحمد وإسحاق
ورواه ابن ماجة
আতা ইবনু ইয়াসার বলেন, আমি আবূ আইঊব আনসারী কে জিজ্ঞেস করেছিলাম রসূল এর যুগে কিভাবে কুরবানী করা হতো? উত্তরে তিনি বললেন : নাবী এর যুগে এক ব্যক্তি একটি ছাগল কুরবানী করত নিজের এবং তার গৃহের সদস্যদের পক্ষ থেকে। অতঃপর নিজেরা খেতো এবং অন্যদেরকে খাওয়াতো ...(তিরমিযী,ইবনে মাযা)।
অতএব এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হচ্ছে সাওয়াবে গৃহের অন্যান্য সদস্যরাও সম্পৃক্ত হবে।তাদের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কুরবানী করার দরকার নাই।
কেউ কেউ এটাকে অবৈধ মনে করেন, তাদের নিকট দলীলটি স্পষ্ট নয় এবং তার পরে খুলাফায়ে রাশেদীন থেকে এমন করা প্রমাণিত নয়। [শারহুল মুমতি ৭/৪৭৯-৪৮০]
(৩) মিৃত্যু পিতা-মাতার নামে নিজের ইচ্ছায় নিজের সম্পদ থেকে সতন্ত্র কোরবানী করা বৈধ না অবৈধ এতে মত বিরোধ আছে। কেউ কেউ মনে করে এধরনের কোরবানী বৈধ –
কারন এটা ছদকা, মাইয়্যেতের ছওয়াবের নিয়তে ছদকা করা নিসন্দেহে বৈধ।
অনেকেই মনে করেন, কোনো মৃতের পক্ষ থেকে স্বতন্ত্ররূপে একটি আলাদা কুরবানী দেওয়া যেমন, একটি ছাগল, গরু,উট বা গরু কিংবা উটের কোনো বিশেষ এক-দুই ভাগ মৃতের জন্য দেয়া বৈধ নয়।কারন সত্যিকারে কুরবানীর সুন্নতটি জীবিতদের জন্য এটা মৃতদের জন্য নয়। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর মৃত প্রিয়া স্ত্রী খাদীজা (রাযিঃ), তাঁর মৃত প্রিয় চাচা হামযা (রাযিঃ) এবং মৃত প্রিয় সন্তানাদির কারোর পক্ষ থেকে কুরবানী দেন নি। বরং তিনি নিজের ও নিজ পরিবারে পক্ষ থেকে কুরবানী দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম মুজতাহীদ ইমামদের মধ্যে কেউ মৃত্যের নামে সতন্ত্র কোরবানী করেছেন বলে কোন প্রমান নেই।
ইমাম আবু হানিফার ছাত্র যুগশ্রেষ্ট ফকিহ ও মুহাদ্দেস আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রঃ বলেন “আমার মতে মৃত্যু ব্যক্তির নামে কোরবানী না করে টাকা ছদকা করাই উত্তম।যদি কোরবানী করে তবে নিজেরা খাবেনা গরীব মিসকিনদের মাঝে ছদকা করেবে(তিরমিযী)।
.
وقد رخص بعض أهل العلم أن يضحى عن الميت . ولم ير بعضهم أن يضحى عنه . وقال عبد الله بن
المبارك : أحب إلى أن يتصدق عنه ولا يضحى وإن
ضحى فلا يأكل منها شيئا ويتصدق بها كلهارواه الترمذى
মুফতি আব্দুল্লাহ খান ফয়েজী
সহঃ অধ্যাপক সানন্দবাড়ী ইসঃ সিঃ মাদ্রাসা,জামালপুর
খতিব- স্লুইচগেট জামে মসজিদ,
রাজিবপুর,কুড়িগ্রাম।
প্রয়োজনে-- ০১৭২৫১৮৩২৪৫